শামীউল আলীম শাওন::
২০১৪ সালের রমজান মাসে ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে পথশিশুদের সহায়তা করার জন্য ফেসবুকে ‘চেষ্টা’ নামে একটি অনলাইন ইভেন্ট খুলে ছিলাম। ইচেছ ছিল ৫ হাজার টাকা সংগ্রহ করবো। সেটা দিয়ে পথশিশুদের ঈদের নতুন জামা ও সেমাই আর চিনি কিনে দিব। যাতে অন্তত ঈদের দিনটা একটু আনন্দে কাটাতে পারে। ফেসবুক ইভেন্টটা ব্যাপক সাড়া জাগায়। কিভাবে হয় তা জানি না। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে টাকা আসতে থাকে। এমনকি বিদেশ থেকেও। এতে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ইভেন্টের জন্য প্রায় ৭০ হাজার টাকার মত সংগ্রহ হয়ে যায়। তবুও টাকা আসতেই থাকে। ফলে বাধ্য হয়ে আমাদেরকে ইভেন্টটা ক্লোজড করে দিতে হয়।
ঠিক এমন করেই নিজের জীবনে ভালো কাজের অনুভূতি প্রকাশ করছিলেন একজন উদ্যেমী স্বেচ্ছাসেবী তরুণী- মাশা আল আইরিন খান।
বাংলা নববর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি’তে নিপীড়নের ঘটনার প্রতিবাদে ‘বিচার হবে না?’ নামে ফেসবুক ইভেন্ট খুলে সে। ইভেন্টের মাধ্যমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একত্রিত করে ধারাবাহিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। অনলাইনের মাধ্যমে একত্রিত হয়ে আন্দোলন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সেটাই ছিল প্রথম।
এছাড়াও ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ড. রেজাউল করিম হত্যার বিচারের দাবিতে রাজপথে আন্দোলনে নেমেছে সে। এখন মাশা দুরবিন ফাউন্ডেশন’র সাথে শারিরিক-প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার নিয়ে এবং ইয়ুথ স্কুল ফর সোশ্যাল এন্টারপ্রিনিয়াস ফাউন্ডেশন’র সঙ্গে তরুণ উদ্যোক্তা তৈরি নিয়ে কাজ করছেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কাজ সম্পর্কে জানতে চাইলে মাশা আল আইরিন খান বলেন, সবসময় সমাজের জন্য উন্নয়নমূলক কাজ করতে চাই। বিশেষ করে নারীদের উন্নয়নে কাজ করার ইচ্ছে আছে। এছাড়াও সামাজিক উদ্যোক্তা হিসেবে আতœপ্রকাশ ঘটতে পারে।
উদ্যেমী নারী মাশা আল আইরিন খান স্কুল জীবন থেকেই নানা সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন। এর মধ্যে স্কাউটস, রেড ক্রিসেন্ট ইন্টারন্যাশনাল ও রক্তদান কার্যক্রম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এভাবেই ছোটবেলা থেকেই নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী বিভিন্নভাবে সমাজের মানুষের উপকার করার চেষ্টা করেন তিনি। তবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ভর্তি হওয়ার পর থেকে সে নিয়মিতভাবে সমাজকল্যাণমূলক কাজ শুরু করে।
রাবিতে অনার্সে পড়াশোনা চলাকালে একটা বিজ্ঞপ্তি দেখে ২০১৩ সালে তিনি রাজশাহীতে একটিভ সিটিজেনের ইয়ুথ লিডারশিপ ট্রেনিংয়ে অংশ নেন। যার আয়োজক ব্রিটিশ কাউন্সিল ও সিসিডি বাংলাদেশ। সেখানে মাশা চার দিনের প্রশিক্ষণ শেষে সমাজ উন্নয়নমূলক কাজে যুক্ত হন। কিছু দিন পরে তিনি রাজশাহীতে অবস্থিত বাংলাদেশের প্রথম কমিউনিটি রেডিও পদ্মায় ‘ইয়ুথ ভয়েস’ নামে একটি অনুষ্ঠানের কোঅর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পান। যা একটিভ সিটিজেনের সোশ্যাল এ্যাকশন প্রোজেক্টের সেরা গ্রুপ প্রোজেক্ট নির্বাচিত হয়। এরপর একটিভ সিটিজেনের ইয়ুথ লিডারশিপ ট্রেনিং থেকে শিক্ষা নিয়ে ভালো কাজ করায়, ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাজ্যে সাত দিনের ইন্টারন্যাশনাল স্টাডি ভিজিটে যাওয়ারও সুযোগ পান মাশা। সম্প্রতি তিনি ব্যান্ড ফোরামের ‘ইয়ুথ ফেস্ট’ এ নারী উদ্যেক্তা হিসেবে রাজশাহী বিভাগীয় পর্যায়ে জয়ী হয়েছেন।
মাশা আল আরিন খান স্কুল জীবনে আর্ট প্রতিযোগিতায় পুরস্কার ও সার্টিফিকেট আর ভাষা প্রতিযোগিতায় ভালো প্রশ্ন করার জন্য বই উপহার পেয়েছেন এবং কলেজ জীবনে বিজ্ঞান মেলায় নির্ধারিত বক্তৃতায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন।
মাশা আল আইরিন খান বর্তমানে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ছাত্রী শাখার রাবির সদস্য এবং তরুণ-তরুণীদের নিয়ে সমাজ উন্নয়নমূলক কাজ করছেন। সেই সঙ্গে অনলাইনের মাধ্যমেও নারী উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কাজ করছেন তিনি। এরই পাশাপাশি মাশা নগরীর সানডায়াল কোচিং সেন্টারে ইংরেজীর প্রশিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন।
রাজশাহী শহরের দক্ষিণ প্রান্তে প্রবাহিত পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকা পাঠানপাড়া। সেই এলাকার মেয়ে মাশা আল আইরিন খান। ১৯৯০ সালের ১৫ আগস্ট রাতে রাজশাহীর লক্ষ্মীপুর মোড়ের শারমিন ক্লিনিকে তার জন্ম। বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওবায়দুল্লাহ্ খান। মা জান্নাতি মহল। ৪ ভাইবোনের মধ্যে মাশা তৃতীয়। বড় ভাই শাহারিয়ার খান। বড় বোন মারিয়া আফরিন খান। ছোট্ট ভাই সাদিদ উদজ্জামান খান।
মাশার লেখাপড়ার হাতেখড়ি মায়ের হাতে। ১৯৯৬ সালে ৬ বছর বয়সে রাজশাহীর পি.এন গভঃ গার্লস স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয় সে। স্কুলজীবনে সবসময়ই এক থেকে দশ এর মধ্যেই অবস্থান ছিল তার। পি.এন স্কুল থেকে ২০০৭ সালে এসএসসি আর নিউ গভঃ ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০০৯ সালে এইচএসসি পাস করেন তিনি। এরপর ২০১০-১১ সেশনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হয়ে সম্প্রতি স্নাতক শেষ করেছে। বর্তমানে মাস্টার্সে পড়াশোনা করছেন।
লেখকঃ রাজশাহী থেকে প্রকাশিত দৈনিক সোনার দেশ-এ স্টাফ রির্পোটার এবং রাজশাহী কোর্ট কলেজ, রাজশাহীতে বাংলা বিভাগে বিএ (অনার্স)-এ অধ্যয়নরত।
পাঠকের মতামত